সিলেকশন নয় ইলেকশন চাই: আব্দুল্লাহ তাহের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। তার আগে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সব বিষয় স্পষ্ট করতে হবে। আমরা ইলকেশন চাই, সিলেকশন নয়।
ঢাকা মহানগর জামায়াতের (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৫টায় রাজধানীর বিজয়নগরে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, অধিকাংশ দলই জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে মত, ভিন্নমত ও নোট দিয়েছেন। সবকিছুর বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার পরও একটি দল বলছে, এর আইনি ভিত্তি নেই। তাহলে কি এই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি আছে? সরকার তো মুখে স্বীকার করছে, কিন্তু সে অনুযায়ী যদি বাস্তবায়ন না করে তাহলে ঈমান থাকে?
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান করতে হবে। তারপর এর আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
তাহের বলেন, এদেশের মানুষ গত ৫৪ বছর কোনো নির্বাচন দেখে নাই। এবার মানুষ আশা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা ইলেকশন চাই, সিলেকশন চাই না। এই নির্বাচন একটি ডিজাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করে জনগণের ভোটাধিকার আবার হরণ করার পাঁয়তারা চলছে। যদি সেরকম তৈরি করা নির্বাচন হয়, বিদেশের ডিজাইনে নির্বাচন হয়, তাহলে মানুষ জীবন ও রক্ত দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আবারো বলছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু তার আগে নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়গুলো জনসম্মুখে উদ্ভাসিত হতে হবে, পরিষ্কার হতে হবে, আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
জামায়াত নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত জুলাই ঘোষণা পত্রকে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল অভিনন্দন জানিয়েছে। বাকি সব রাজনৈতিক দল ইতিবাচক বলে বলেছে, যদি, যদি এটা করা হয়, ওইটা করা হয়। অর্থাৎ অধিকাংশ দল শর্তহীনভাবে জুলাই ঘোষণাকে গ্রহণ করেনি।
আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার জরুরি। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন। মাসের পর মাস, সংস্কার কমিশন করে আমাদের প্রচুর সময় নিয়েছেন, ব্রেইন স্টর্মিং হয়েছে। সবকিছুতে ঐকমত্য হওয়ার পর তারা বলছেন এটার কোনো আইনি ভিত্তি নাই। আইনি ভিত্তি যদি না থাকে তাহলে সংস্কার কী হয়েছে?
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ঈমানের তিন স্তর। ঐকমত্য পোষণ, আইনি মর্যাদা প্রদান ও কার্যকরকরণ! সরকার মুখেই মানছে, বাকি দুটিতে মানে নাই। তাহলে কি ঈমান আনছে? সংস্কার হইছে? হয় নাই। অথচ সংস্কার জরুরি এটা তো সরকারই বলছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা চাই সংস্কারের যেসমস্ত জায়গায় ঐকমত্য হয়েছে, সেটার আলোকেই আইনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হতে হবে।
তাহের বলেন, আমাদের বন্ধুরা বলেন, সংস্কার আমরা পার্লামেন্টে গিয়ে করবে। আপনারা যদি পার্লামেন্টে গিয়েই করেন তাহলে এখন করতে সমস্যা কী? তাহলে ‘কুচ কালা হ্যায়’? হ্যায় অর নেহি হ্যায়? কী বলেন, হ্যায় অর নেহি হ্যায়? হ্যায়, হ্যায়। কোনো কালো দাগ নিয়ে, জনগণ বিতর্কিত কোনো নির্বাচনে আর যাবে না, যেতে চায় না।
“অনেকে বলেন, পিআর বুঝি না। গতকাল এটা সার্ভেতে দেখলাম ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তাহলে আমরা যারা রাজনীতিবিদ তারা বুঝি না, কিন্তু জনগণ তো বোঝে? যদি তারা নাই বোঝে তাহলে ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় কেমনে? তার মানে আপনি বোঝেন না, সেটা ঠিক নাকি বুঝতে চান না সেটা ঠিক? বুঝেও বোঝে না। জামায়াত গণতন্ত্রের পক্ষে। গণতন্ত্রে মেজোরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেড। ৭১ শতাংশ মানুষ মেজরিটি নাকি মাইনোরিটি! চশমার কারণে হয়তো তারা উল্টা দেখছেন!”
তাহের বলেন, ৭১ শতাংশ মানুষ যদি পিআর চায় তাহলে আপনাদের বিরোধিতা করার কী অধিকার আছে। মেজরিটি মানুষের মত প্রকাশের আলোকে বাস্তবায়নই হচ্ছে ডেমোক্রেসি। যারা মুখে বলে ডেমোক্রেসি কিন্তু বাস্তবে চায় না, তারা ‘মুখ মে শেখ ফরিদ বগলমে ইট’।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসেন ডায়ালগ করি। সরকারকে আহ্বান জানাবো, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ডায়ালগে বসুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, আসেন ইন্টার পার্টি ডায়ালগ করি। দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবেন না, জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না, আরেকটি ১/১১ এর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না। আমরা রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সবাই মিলে অবাধ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ তৈরি করি।
তিনি বলেন, অনেকে বলেন, অংশগ্রহণমূলক বলতে কি আওয়ামী লীগকে বোঝান? নো, অংশগ্রহণমূলক মানে জনগণের অংশগ্রহণ। আগে তো জনগণ আসত না, ভূত আসত ভোট দিতে, শয়তান আসত, ব্যালটবাক্স মানুষের ভোট ছাড়াই ভর্তি হয়ে যেত। সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে, দেশ টিকবে না, স্বাধীনতা টিকবে না। সুতরাং রাজনীতিবিদদের প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। আসুন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে উদ্যোগ গ্রহণ করি।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তাহের বলেন, এটি সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। প্রধান উপদেষ্টা আপনি মালয়েশিয়ায় বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও ঐতিহাসিক নির্বাচন করবেন। এটা কি মুখের কথা? যদি তা না হয়, তাহলে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন, সংস্কারকে আইনি ভিত্তি দিন।
না পারলে তাহের নিজের উপরে দায়িত্ব চেয়ে বলেন, অনেকে অপপ্রচার করে এটা করতে অনেক সময় লাগবে। আমি বলি এসব অপপ্রচার। কিচ্ছু লাগবে না। মাত্র এক সপ্তাহ লাগবে। তাহলে আমার ওপর দায়িত্ব দেন। আপনি যেমন আলী রীয়াজের ওপরে দায়িত্ব দিছেন, আপনি তেমনি আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের ওপরে দায়িত্ব দেন, আমরা আপনাকে আইনে, সংবিধানে কী রাস্তা আছে দেখিয়ে দেবো। যদি আমরা প্রমাণ করতে পারি, রাস্তা তৈরি করতে পারি তাহলে তো আপনাদের সমস্যা থাকার কথা না!
মানুষকে আর বোকা বানানোর সুযোগ হবে না উল্লেখ করে তাহের বলেন, মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কেউ কেউ বলেন, ক্ষমতায় গেলে করব। ওনারা যে ক্ষমতায় যাবেন, এটার নিশ্চয়তা পাইছেন? ভোটের আগে যদি একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা পান তাহলে নির্বাচনটা কেমন হবে সেটা বোঝা যায়, নাকি যায় না! তাদের কথার ভেতরেই তো ফাঁক!
তাহের বলেন, আমরা অনেকগুলো দল আলাপ-আলোচনা করছি। আমরা সবাই দেশের কল্যাণ চাই, নির্ভেজাল গণতন্ত্র চাই, আমরা জনগণের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। যারা এমন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে নানা কথায়, নানান অজুহাতে বাধা সৃষ্টি করে ধুম্রজাল তৈরি করে, তারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
এই দেশ আমাদের-আপনাদের সবার। দেশ কীভাবে চলবে সেই সিদ্ধান্ত হোক জনগণের। আসুন নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যে দাবিগুলো পূরণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেগুলো আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে চাই। সব দলকে বলব, রাউন্ড টেবিলে মন খোলা রেখে আলোচনার পথ খোলা রাখি। আর জনগণ এখন অনেক সচেতন। কোনো দলকে তারা আর অন্ধভাবে সমর্থন করে না।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।