রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫ , ২৫.শ্রাবণ.১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ৯ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১৭:৪২, ৯ আগস্ট ২০২৫

‘রাজাকারের’ছবি টানানোর ঘটনা ‘বাড়তে পারে, শঙ্কা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

‘রাজাকারের’ছবি টানানোর ঘটনা ‘বাড়তে পারে, শঙ্কা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছবি:সংগৃহীত

দেশের বাম ধারার দলগুলোর নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে সামাজিক বিপ্লব তৈরি না করতে পারলে, টিএসসিতে ‘রাজাকারের’ ছবি টানানোর ঘটনা সারা দেশে আরও ‘বেগবান’ হবে বলে মনে করেন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
    

তার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটা উপনিবেশে পরিণত হয়েছে, যার শাসনের দায়িত্বে আছে বুর্জোয়ারা।

 

শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই অভিমত দেন।

 

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত নেতাদের ছবির প্রদর্শনী করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, যা শিক্ষারর্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।

 

একাত্তরে জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তায় ‘আল বদর’ ও ‘আল শামস’ বাহিনী গঠন করেছিল।

 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এখন বাংলাদেশ একটা উপনিবেশে পরিণত হয়েছে, আগে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, পাকিস্তানের উপনিবেশ ছিল। এখন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক শাসকরা, যা করে বুর্জোয়া শাসকরা, সেই একইভাবে শাসন করছে।

 

তিনি বলেন, “সরকার পতনের মাধ্যমে মনে হয়েছিল ফ্যাসিবাদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদ চরম মাত্রায় রূপ নিয়েছে। যার কারণে দক্ষিণপন্থিরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদীদের আধিপত্য ঘটছে।”

 

এই সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদের মতে, এখন সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলাই হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, “যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করে, তাদের নিয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করতে হবে।এই যুক্তফ্রন্ট ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের মত হযবরল যুক্তফ্রন্ট হবে না। এই যুক্তফ্রন্ট হবে বামপন্থিদের। এই যুক্তফ্রন্ট শক্তিশালী হবে।”

 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই যুক্তফ্রন্টের উপর।

 

ঐক্য গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “একা বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভব নয়। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও সামাজিক বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বুলেটকে উপেক্ষা করে ছাত্র শ্রমিক জনতা বিজয় এনেছে। এক বুক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা বুকে বুলেট নিয়েছে।

 

কিন্তু রক্তের দাগ না শুকাতেই তাদের মধ্যে হতাশা গ্রাস করেছে। এই হতাশা গ্রাস করা অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ বর্তমান সরকার বুর্জোয়া ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে।”

 

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “মব সৃষ্টি করে গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির, রাজাকার-আলবদর, এনসিপির দলের ছাত্ররা, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে, তারাই গুপ্তভাবে নিজেদের রাজনীতি করতে সুবিধার জন্য গতকাল মব সৃস্টি করে অন্যদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাধ্য করছে।”

 

তার মতে, একটা সংস্কার করতে চাচ্ছে, সেটা হল বুর্জুয়া সংস্কার। সংস্কারের নামে তারা চুনকাম করতে চায়, সেখানে জাতীয় মূলনীতিতে হাত দিয়েছে।

 

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ফেইসবুকে দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে ফিরোজ বলেন, “২৪ এর গণ আন্দোলন নাকি একাত্তরকে অতিক্রম করেছে, আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ৭১ কে ২৪ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চাইলে, এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

 

বাসদ-মার্কসবাদীর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, “শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করলে চলবে না, এই বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসছে তারা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠছে, তাই আমাদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকবে।”

 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু।

 

আরও বক্তব্য দেন- ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতা হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক সুনয়ন চাকমা।