রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫ , ২৫.শ্রাবণ.১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ৯ আগস্ট ২০২৫

আদিবাসীরা আরও প্রান্তিক হচ্ছে: সন্তু লারমা

আদিবাসীরা আরও প্রান্তিক হচ্ছে: সন্তু লারমা
সন্তু লারমা ছবি:সংগৃহীত

আদিবাসীদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চয়তা ও শঙ্কায় ভরা মন্তব্য করে জ্যোতিরিন্দ্র বলেছেন, আদিবাসীরা আরও প্রান্তিক হচ্ছে। 

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের এই সভাপতির মতে, ‘ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে চলমান সংস্কার কার্যক্রমে আদিবাসীদের কার্যকর কোনো সংগঠন বা নেতৃত্বের সাথে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়নি।’

শারীরিক অসুস্থতার কারণে শনিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের সমাবেশে তিনি উপস্থিত না থাকলেও লিখিত বক্তব্য পাঠান। সমাবেশে তার বক্তব্য পাঠ করা হয়।

সন্তু লারমা বলেন, ‘বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলের অধিকাংশ জনগণ এখনও অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে দিন যাপন করছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশে তারা ক্রমশ ভূমিহীন ও দেশান্তরী হচ্ছেন।পাহাড়ের আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৮ বছরেও এ রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করছে না। ফলে পাহাড়ে বিদ্যমান সমস্যার নানা রূপ প্রতিফলিত হচ্ছে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের পরিস্থিতি আরো বেশি নাজুক। ভূমি থেকে উচ্ছেদ, নারী নিপীড়ন, বৈষম্য, বিচারহীনতা- এসবের মাধ্যমে প্রান্তিক থেকে আরও প্রান্তিক হচ্ছেন আদিবাসী জনগণ।’

আদিবাসী জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম জোরদারকরণে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


সন্তু লারমা বলেন, “প্রান্তিকতার খাদ থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসে আদিবাসীদের লড়াইকে আরো ঐক্যবদ্ধ ও সংহত করে অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার জন্য সমগ্র আদিবাসী জনগণ ও প্রজন্মের তরুণদেরকে আমার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।”

অধিকার আদায়ের লড়াই ও সংগ্রামকে বেগবান করা এবং গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রগতিশীল আদর্শের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন এই আদিবাসী নেতা।

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়, ভূমি কমিশন গঠনসহ সাতটি দাবি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার পাশাপাশি সমাবেশ ছিল আদিবাসী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বাদ্যযন্ত্রসহ ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

হাজং, বম, খাসিয়া, মারমা, গারোসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।

এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ গঠনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্থক প্রয়োগ’।

সমাবেশের আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। 

সমাবেশ থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো-

১. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারসহ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

২. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

৩. সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

৪. আদিবাসীদের সম্পর্কে বিকৃত, খণ্ডিত বা মিথ্যা তথ্য প্রচারকৃত সকল গণমাধ্যম, মিডিয়া বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে।

৫. আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করাসহ সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

৬. জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আইএলও ১৬৯ নম্বর কনভেনশনে অনুসমর্পণ এবং আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭. রাষ্ট্রীয়ভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদ্যাপন করতে হবে।


সমাবেশে সভঅপতিত্ব করেন সভাপতির আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া বাণীর বাংলা অনুবাদ পাঠ করেন বৈশাখী হাজং।

 

আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, নারী বিষয়ক সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, সদস্য হেলেনা তালাং, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যাসহ অনেকে বক্তব্য দেন। পরে একটি শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।