সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫ , ২৭.আশ্বিন.১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৪ আগস্ট ২০২৫

মানব বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে

বছরে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ী সম্ভব

বছরে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ী সম্ভব
ছবি : পলিটিক্সবিডি

বাংলাদেশের যে পরিমান মানব বর্জ্য উৎপাদন হয় প্রতিদিন সেটা কাজে লাগিয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে বছরে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব বলে মনে করছেন খুলনা ইউনির্ভাসিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (কুয়েট) এর গবেষনা। মানববর্জ্যের সঙ্গে গৃহস্থালীর অন্যান্য বর্জ্যের সংমিশ্রণে তেল উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভবানা খুবই প্রবল।  কুয়েটের একটি গবেষক টিম

এর গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। মানববর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের গবেষণায় সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে তারা । 
বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণায় নেতৃত্বদেন কুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ খালেকুজ্জামান। পাইলট ওই প্রকল্পের ফলাফল গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

গবেষণা টিম প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ খালেকুজ্জামান বলেন, গবেষণায় দেখেছি ১ টাকা বিনিয়োগ করে ৬ টাকা পর্যন্ত আয় করার সুযোগ রয়েছে। দুই ধরণের মডেলে একটি ৫ বছরে আরেকটি ৯ বছরে বিনিয়োগ উঠে আসবে। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল বা ক্রুড অয়েলের বাজার। এই বাজারের পরিমাণ স্বর্ণের চেয়েও বেশি। ক্রুড অয়েলের বার্ষিক টানওভার ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। বাংলাদেশের প্রাথমিক জ্বালানির ৫৬ শতাংশ জুড়ে রয়েছে ক্রুড অয়েল। আমরা যদি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারি, তাহলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। কারণ ১ টাকার ক্রুড অয়েল উৎপাদন মানে সেই পরিমাণ ডলার সাশ্রয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু দৈনিক ২০০ গ্রাম মানববর্জ্য এবং ৪০০ গ্রাম অন্যান্য গৃহস্থালীর বর্জ্য উৎপাদন করে। বছরে মানববর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ১৪ মিলিয়ন টন, আর ১৮ দশমিক ৪০ মিলিয়ন টন অন্যান্য বর্জ্য। এসব বর্জ্য হাইড্রোথার্মাল লিকুই্যফেকশনের মাধ্যমে বায়োক্রুড তৈরি করা হচ্ছে। সেখান থেকে শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজেল, পেট্রোল এবং অকটেন উৎপাদনে সফল হয়েছি। তেলের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত বায়োকোল (তেল উৎপাদনের পর অবশিষ্ট বর্জ্য) উচ্চদহন ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়া গেছে। যা বিটুমিনাস কয়লার মতো কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কয়লার বিকল্প হিসেবে ব্যবহারে শুধু একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেটি হচ্ছে কয়লার তুলনায় এই বর্জ্যে অ্যাশের (ছাই) পরিমাণ অনেক বেশি। বিটুমিনাস কয়লায় অ্যাশের পরিমাণ ৫-১২ শতাংশ থাকে, আর বায়োকোলে ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এখানে অধিকত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, একটি বাণিজ্যিক বায়োরিফাইনারীতে দৈনিক ১ থেকে ২ হাজার ব্যারেল উচ্চমানের ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করা সম্ভব। বছরে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি সোয়া ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টন বায়োকোল উৎপাদন করা যাবে। আমাদের উৎপাদিত তেল বুষ্টার হিসেবে কাজ ব্যবহার উপযোগি।
গবেষক টিম প্রধান আরও বলেন, আমাদের বর্জ্যের মধ্যে ৭০ শতাংশ যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। আমরা যদি এসব বর্জ্যকে মূল্যবান সম্পদে রূপান্তর করতে পারি। এটি পরিবেশবান্ধব ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জণে সহায়ক। আমাদের গবেষণা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেছি, সেখানেও ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। গবেষনার প্রকল্পটির সফলাত তুলে ধরার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমরা ৩০ বছরে ধরে এ বিষয়ে আলোচনা শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবমুখী কোন সমাধান পাইনি। জ্বালানি তেল উৎপাদনের গবেষণা খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা আশা করবো সকলের সহযোগিতায় বিষয়টি এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিইআরসির গবেষণা তহবিল নীতিমালা না থাকায় ব্যবহার করা যায়নি এতোদিন। নীতিমালা নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে, তিন-চার মাসের মধ্যেই প্রকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের গবেষনায় মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের সংকট গবেষনা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে। 

ইপিআরসি,র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে সফল গবেষা খুবই কম। আমরা চেষ্টা করছি গবেষনাকে উৎসাহিত করতে। ইতোমধ্যে একটি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আরও তিন থেকে চারটি চুক্তি হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষনার লক্ষ্যে । তবে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে সব গবেষনাই যে বানিজ্যিকভাবে সফল হবে তা না। অনেক গবেষনা করলেও হয়তো কোন কোন বিষয়ে সফলতা আসবে। গবেষনা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না যেন আমরা সব কিছুইতে বিরাট প্রত্যাশা করে বসে থাকি। তিনি বলেন গবেষনার  ফলাল অনেক সময়সাপেক্ষ দুই তিন বছরও লেগে যায়। 

বিশেষ অতিথি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যে অনেক গবেষনা হয়। বাস্তবে সেগুলো তেমন সুফল বয়ে আনতে পারে না। তবে আমাদের পরিবেশ, জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ফলিস ফুয়েল থেকে বের হয়ে আসতে গবেষনা ও উদ্ভাবনে কোন বিকল্প নাই। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিইপিআরসি (ইনোভেশন) সদস্য ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম। বিইআরসি সদস্য ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সবুর হোসেন প্রমুখ।