সেমিনারে বক্তারা
এলডিসি থেকে উত্তরণ ৬ বছর পেছানোর পরামর্শ

বর্তমান বাস্তবতায় স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ আত্মঘাতী হবে জানিয়ে তা ছয় বছর পেছানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদ, বাণিজ্য বিশ্লেষক, গবেষক ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা।
তারা বলেন, এলডিসি উত্তরণে সময় এখন উপযুক্ত নয়। রপ্তানি বাণিজ্যে সক্ষমতা কমে রপ্তানি আয় কমবে, বিদেশি ঋণের সুদহার বাড়বে, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেওয়া যাবে না—এ রকম আরও অনেক কারণে কোনোরকম বাছ–বিচার ছাড়া শুধু ইজ্জতের চিন্তা করে এখনই এলডিসিতে থেকে উত্তরণ হবে দেশের জন্য আত্মঘাতী। মসৃণ এবং টেকসই উত্তরণে আরও অন্তত ছয় বছর পেছানো উচিত।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকালে এক সেমিনারে এ পরামর্শের পেছনে বেশকিছু যুক্তি এবং প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ: বাংলাদেশের সামনে কিছু বিকল্প’ শিরোনামে রাজধানীর একটি হোটেলে এই সেমিনার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসিবি)।
সেমিনারে মসৃণ উত্তরণে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের কথা বলা হয়। এই প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দল, সরকার, আমলা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণকে আমরা সমর্থন করি, তবে যথাযথ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় দরকার। সামনে জাতীয় নির্বাচন তার প্রভাব থাকবে অর্থনীতিতে, পরবর্তী সময়ে আসবে নতুন সরকার—সব মিলিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, গত বছরের আগস্ট থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীদের আস্থায় প্রভাব পড়ছে।
আলোচনায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং হা–মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে এখন এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
এলডিসি থেকে উত্তরণে রপ্তানি বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়তে সেই পরিসংখ্যান তুল ধরে তিনি বলেন, জোটগত সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বর্তমানে শুল্ক নেই। উত্তরণের পর শুল্ক হবে ১২ শতাংশ, কানাডায় হবে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ। জাপানে হবে ১২ দশমিক ৮ শতাংশের মতো। এতে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিময়ে তাহলে লাভ কী দাঁড়ালো?
উৎপাদন ব্যবস্থায় গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো দুর্বলতার কথা তুলে ধরে এ. কে. আজাদ বলেন, আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণ চাই, তবে এটি হতে হবে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার পর। এজন্য অন্যান্য বক্তার সঙ্গে তিনিও অন্তত ছয় বছর উত্তরণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, আজকের সেমিনারের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে একটি ড্রাফট তৈরি করে সব বাণিজ্য সংগঠনের সই নিয়ে তা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অফিসে পাঠাতে হবে। আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে এ দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা সংস্থা দ্য থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের (টিডব্লিউএন) লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও গবেষক সানিয়া রেইড স্মিথ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় প্রমুখ।